মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১১

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : মসজিদে হারামের সম্মানিত ইমাম কি বলেন


 

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : মসজিদে হারামের সম্মানিত ইমাম কি বলেন

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৬

সূধী মণ্ডলী,
মুসলিম ব্যক্তি শক্তি, শৌর্যবীর্য, সম্মান ও মর্যাদার ঠিক ততটুকু অংশ পায়; যতটুকু সে ইসলামকে নিয়ে গর্ববোধ করে, ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের উপর অটল থাকে, ইসলামী আদব-আখলাক ও শিষ্টাচারে নিজেকে সুসজ্জিত করে এবং বিপরীতমুখী নীতি-নৈতিকতার অন্ধ অনুকরন ও অজানা সব আদর্শের তাঁবেদারী থেকে বেঁচে থাকে যে শৌর্যবীর্য ও সম্মান ও মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মুসলিমের, বরং প্রতিটি মুসলিম জনপদের তা অর্জনের মূল সূত্র হচ্ছে- রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) অনুসরন করা, তাঁর আদর্শের অনুকরন করা এবং অভিনব আদর্শ, অভূতপূর্ব সব পথ ও মত থেকে দূরে থাকারাসূলের অনুসরন হতে হবে এমন যাতে কোন কপটতা থাকবে না, বরং থাকবে নিরেট ভালোবাসা ও অগাধ আন্তরিকতা অনুকরন হতে হবে এমন যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর মাঝে এ উপলব্ধি জাগ্রত করবে যে, আচার-আচরণ, শিষ্টাচার ও ধর্মীয় সকল বিষয়ে এককভাবে আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে, অন্য কারো আনুগত্য করা চলবে নাযেহেতু আনুগত্য ও অনুসরন ছাড়া কোন ধর্মই হতে পারে নাআর এ কারণেই মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে- এটাই আমার পথ, সরল ও সোজা তোমরা এ পথ ধরে চল, অন্য পথগুলোর দিকে ধাবিত হয়ো না, তাহলে তোমাদেরকে ভিন্নদিকে নিয়ে যাবেআল্লাহর পথ ব্যতীত অন্য সব পথের মুখে একটা করে শয়তান আছে, সে মানুষকে ঐ পথের দিকে ডাকেযে তার ডাকে সাড়া দেয় তার মাঝে বিদআতের (নতুন আদর্শের, নতুন চালচলনের) প্রেম জাগাইয়া তোলে, এবং সুন্নত (রাসুলের আদর্শ) থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়এটা হলো শয়তান ও বনী আদমের মাঝে বন্ধুত্বের প্রথম ধাপশয়তানের ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তিগুলো চলাচলের পথে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুস্কৃতিকারী চক্রের ন্যায়, যারা দোদুল্যমান, দ্বিধাগ্রস্থ পথচারীদেরকে টার্গেট করে বসে থাকে, আর একজনকে শায়েস্তা করতে পারলে সবকিছু লুটে কোন ময়লা-আবর্জনার ডোবায় নিয়ে নিক্ষেপ করেএভাবে শয়তানও তার অনুসারীদেরকে রাসূলের সুন্নাহ থেকে দূরে নিয়ে যায়শয়তানের অনুসারীরা হয়তোবা প্রথম ডাকে সম্পূর্ণ বিপথে চলে যায় এবং শয়তানের রঙ্গে রঞ্জিত হয় অথবা তাদের অবস্থা হয় ঐ ব্যক্তির মত শয়তানেরা পথ ভুলিয়ে যাকে দিশেহারা করে ফেলেছে, তার সঙ্গীরা (যারা সঠিক পথে আছে) বলে, 'তুমি আমাদের পথে আস' (কিন্তু সে তো দিশেহারা), (হে রাসূল,) আপনি বলুন আল্লাহর পথই সঠিক পথআমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে আমরা যেন বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের প্রতি আত্মসমর্পন করি” [সূরা আনআম-৭১]

মুসলিম ভায়েরা,
আল্লাহকে ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন হল একনিষ্ঠভাবে তাঁর রাসূলের অনুসরন করাআল্লাহর বান্দাদের উচিত তাঁকে ভালোবাসার নিদর্শন সরূপ তাঁর রাসূলের অনুসরনের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা, যাতে তাদের ভালোবাসার দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়ঠিক যেভাবে আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন, “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করতবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। (হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করযদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দিন আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসেন না” [সূরা আলে ইমরান ৩১,৩২]

আল্লাহর বান্দারা,
সমাজে চালু থাকা বিদআত বা নতুন বিষয়াদি যেন প্রলয়নকারী তুফান, আর সহীহ সুন্নাহ ও তার অনুসরন হচ্ছে নুহের কিস্তি তুল্যযে এ কিস্তিতে আরোহন করেছিল সে রক্ষা পেয়েছে, আর যে অন্য পথ ধরেছে সে ডুবে মরেছেআর আল্লাহর রহমত ছাড়া তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষাকারী কেউ নেই”[আলকুরআন] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে ব্যক্তি আমাদের ধর্ম-দর্শনে নব কিছু সংযোজন করবে যা তার মধ্যে ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত, অগ্রহনযোগ্য” (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিম শরীফের অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে সকল কর্মের ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই তা প্রত্যখ্যাতআল্লাহর বান্দারা, এ হাদীসটি ঈমানের একটি সুমহান মূলনীতি, এবং বাহ্যিক-আমলগুলো মূল্যায়নের সঠিক মাপকাঠি সুতরাং যে সকল কর্মে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুমোদন নেই তা ইসলামে অনুমোদিত নয়ইমাম নববী বলেন, এ হাদীসটি মুখস্ত থাকা উচিত, অস কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ হাদীসটিকে প্রয়োগ করা উচিত, এবং এ হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করা বাড়ানো উচিতবর্তমান মুসলমানদের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের প্রতি নজরদানকারী যে কেউ নিশ্চিতভাবে একটা রায় দেবেন যে, মুসলমানদের উচিত আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়া এবং তাদের উচিত অনুসরণীয় জাতি হওয়া, তাঁবেদার নয়; এমন জাতি হওয়া যাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, চাল-চলন একান্ত নিজস্ব, আইনের উসও স্বতন্ত্র, যার কোন তুলনা নেইএমন জাতি হওয়া যে তার প্রভাব খাটিয়ে, আধিপত্য বিস্তারের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে অন্য সব শিল্প-সংস্কৃতি ও সমাজ-সভ্যতাকে হার মানাবেবিশেষতঃ আকীদা-বিশ্বাস ও চাল-চলন, শিষ্টাচারের ক্ষেত্রেবিভিন্ন সভ্যতা ও জাতিগুলোর মাঝে যে অভ্যাস আবহমান কাল থেকে চলে আসছে তা হল অন্য জাতির সংস্কৃতি, আদব-আখলাক, রীতি-নীতি দ্বারা প্রভাবিত না হওয়াবরঞ্চ অন্য কোন সংস্কৃতি যদি তার সংস্কৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায় তখন সে ঐ সংস্কৃতি থেকে আরো অনেক দূরে সরে যায়আর ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা মানে নিজস্ব সংস্কৃতির আরো কাছে আসাযার ফলে কোন জাতি অন্য জাতির আচার-অনুষ্ঠান, কৃষ্টি-কালচার, দিবস পালন, সব ইত্যাদির প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করে নাকিন্তু অনাচারী মিডিয়া সুকৌশলে মুসলিম মিল্লাহর অন্দরে ঢুকে তাদের অনেকের ধ্যান-ধারণা, আকীদা-বিশ্বাস চুরি করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের বিবেক বুদ্ধিকে গুলিয়ে দিতে পেরেছে, তাদের দৃষ্টি-ভঙ্গি প্লাটে দিতে সক্ষম হয়েছেএমন শক্তি প্রয়োগ করেও যে পরিবর্তন সম্ভব নয় মিডিয়ার মাধ্যমে তা করা সম্ভব হচ্ছে বড় দুঃখের বিষয় হচ্ছে- এ মিডিয়ার দুরন্ত উত্থান এবং মুক্ত সভ্যতা ও মুক্ত সংস্কৃতির অবাধ সয়লাবের ফলে এমন এক মিশ্র সংস্কৃতির তৈরী হয়েছে যার নিয়ন্ত্রণ কাঠি এখন আর মুসলমানদের হাতে নাই, যে সংস্কৃতিতে ইসলামী নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ-বিশ্বাসের কোন তোয়াক্কা করা হয় না, যে সভ্যতাতে মুসলমানদের রীতিনীতির পক্ষে কি বিপক্ষে তা খেয়াল করা হয় না এভাবে তারা মুসলমান ও অমুসলমান সবাইকে অভিন্ন সংস্কৃতির গোলামে পরিণত করেছে, অথচ মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব জীবন-দর্শন, স্বতন্ত্র আকীদা-বিশ্বাস, বিশেষ অনুকরণ ও অনুসরণ যা অন্যদের নেইফলে এ যেন দূধে ঘোল মিশাবার মত অবস্থা এবং মুসলিম উম্মাহর উপর আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব বিপদ সীমায় পৌঁছে গেছেআর মুসলমানদের একটা অংশ তো প্রতিটি নতুন ও বিরল সংস্কৃতির প্রতি একেবারে মোহাবিষ্টভাল-মন্দের কোন প্রকার বাছ বিচার না করে, লাভ-ক্ষতির প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে, নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা তা না দেখে এরা প্রতিটি অভিনব সংস্কৃতির সুধা পান করে চলছে

হায় আল্লাহ, নিজ জাতির প্রতি নিষ্ঠাবান একজন পরহেজগার ঈমানদারের জন্য এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে যিনি দেখতে পাচ্ছেন মিডিয়ার হাতে জিম্মি হয়ে তার জাতির লোকেরা বিজাতীয় আগ্রাসনের সামনে দলিত মথিত হয়ে অস্তিত্ব হারাতে যাচ্ছেন, যিনি দেখতে পাচ্ছেন অতি সন্তর্পনে পর্দার আড়ালে থেকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আকীদা-বিশ্বাস ও চাল-চরিত্রে বিষাক্ত জীবানু ছাড়নো হচ্ছেযার ফলে কোন কোন মুসলিম সমাজে যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষতবাণীর বাস্তব নমুনা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে- তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাটায় কাটায় অনুকরন করবে, এমনকি তারা যদি কোন গুঁইসাপের গর্তেও ঢুকে থাকে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবেসাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, পূর্ববর্তীরা বলতে কি ইহুদী ও খ্রিস্টানদের বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন তারা না হলে আর কারা!” [বোখারী ও মুসলিম] এ যেন ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহুর বাণীর বাস্তব নমুনা, তিনি বলেছিলেন – “আচার-আচরণ ও নীতি- আদর্শে বনী ঈসরাইলের সাথে তোমাদের সাদৃশ্যটা খুবই ঘনিষ্টতোমরা পলে পলে তাদের কর্মের অনুকরন করবে, কিন্তু আমি জানি না তাদের মত গো বাচুরের উপাসনাও তোমরা করবে কি না?” কিন্তু জেনে রাখুন, এসব প্রোপাগাণ্ডা সত্তেও মানুষের মাঝে আল্লাহ প্রদত্ত নিস্কলুষ যে স্বভাব রয়েছে, একত্ববাদের যে ভিত রয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে বিবেকবানদের জাগিয়ে তোলা সম্ভব এবং বিজাতীয় দিবস পালন ও বিধর্মীদের আকীদা-বিশ্বাস থেকে মুসলমানদের ফিরিয়ে আনা সম্ভবকারণ সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী, সত্যকে কোনদিন একেবারে মিটিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, ক্ষনিকের জন্য ঢাকা পড়ে গেলেও সত্যের রশ্মি পুনরায় জ্বলে উঠেবাতিলের এতসব লম্পজম্পের বিপরীতে আমরা নিষ্ঠাবান মুসলিমদের অন্তরে সে রশ্মির আলোকচ্ছটা স্পষ্ট দেখতি পাচ্ছি, তাদের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন আপনি তাদেরকে দেখতে পাবেন নসিহতকারী হিসেবে, স্পষ্টবাদী সতর্ককারী হিসেবে থেকে এ সত্যই বেরিয়ে আসে যে, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রথম ধাপে যতই প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে প্রবেশ করুক না কেন স্বীয় ধর্মের উপর অটল, নিজ পরিচয়ে অনঢ় ব্যক্তির সামনে তা মূহুর্ত কালও টিকে নাহতে পারে ব্যক্তির মুসলিম পরিচয় কখনো কখনো দূর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু তা কখনো একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় নাএরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো, অজ্ঞদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো নাআল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না; যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ তো মুত্তাকীদের বন্ধুএই কুরআন মানব জাতির জন্যে সুস্পষ্ট দলীল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে পথ-নির্দেশ ও রহমত” [সূরা জাছিয়া-১৮-২০] আল্লাহ আমার ও আপনাদের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর বরকত নসীব করুনএতক্ষণ যা বলেছি তা আমার বক্তব্য; যদি সঠিক হয় তবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যদি ভুল বলে থাকি তবে তা আমার নিজের এবং শয়তানের পক্ষ থেকেআমি আল্লাহ পাকের কাছে আমার গুনা-খতার জন্য ও আপনাদের গুনা-খতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনারাও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন

দ্বিতীয় খোতবা
সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, আর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক ঐ নবীর উপর যার পর আর কোন নবী নাই

মুসলিম ভায়েরা,
আল্লাহকে ভয় করুনআর জেনে রাখুন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এবং আতঙ্কিত হওয়ার মত একটা বিষয় হলো- কিছু কিছু মুসলমান অমুসলিমদের উসবে অংশ গ্রহন ও তাদের দিবস পালনের মাধ্যমে তাদের আকীদা-বিশ্বাস, শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচারের প্রতি চরমভাবে ঝুকে পড়ছেযেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম, এবং ইসলাম এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেকিন্তু এর চেয়েও দুঃখের বিষয় হল, আমরা লক্ষ্য করছি কিছু কিছু নির্বোধ লোক এগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অন্যদেরকে ও বিপদগামী করতে উদ্যত হচ্ছেতারা মনে করছে এর মাধ্যমে অন্য জাতির লোকদের সাথে ইতিবাচক সখ্যতা গড়ে উঠবে এবং কৃষ্টি-কালচার ও আচার-আচরণের একটা সেতু বন্ধন তৈরী হবে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরো অনেকে এ পথে ধাবিত হয়েছে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছি যে, যে কোন ব্যক্তি তাদের কর্মকাণ্ডের মাঝে শরীয়ত গর্হিত বিষয় স্পষ্ট দেখতে পানযে কোন বিবেকবান ব্যক্তি তাদের যে কর্মটির কড়া প্রতিবাদ করবেন তা হল অমুসলমানদের ঈদ উসব দ্বারা নিজেরা প্রভাবিত হওয়া ও অন্যদেরকেও এর প্রতি সাহিত করাতারা এই যুক্তিতে বিষয়টিকে শিথিলভাবে দেখতে চান যে উন্মুক্ত বিশ্বে আজ মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই, এবং ধর্মীয় বা বিশ্বাসনির্ভর বিভিন্ন দিবস ও উসব পালনে জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়এই মতাদর্শ অত্যন্ত বিপজ্জনক -আল্লাহ পাক আপনাদেরকে হেফাজত করুন-, যদি আপনারা দেখতে চান তবে দেখুন ভালবাসা দিবসবা মাতৃ দিবসবা এ ধরনের অন্যান্য দিবসগুলো মুসলমানদের আকীদা-বিশ্বাস ও চরিত্রের উপর কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেঅথচ এসব দিবসের গোড়ার কথা তারা জানে না, এ দিবসগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে তারা অজ্ঞ এবং এ দিবসগুলো মুসলমানের আকীদা-বিশ্বাস ও আখলাকের জন্য কতটুকু হুকমি তাও তারা ভেবে দেখতে নারাজ, বিচারও তারা করে না এগুলো পালনের মাধ্যমে বিজাতীদের সাথে সাদৃশ্য অর্জিত হবে যা থেকে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে নিষেধ করেছেন, এবং বিজাতীদের বিরুদ্ধাচারণ তরক করা হবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যা করার আদেশ দিয়েছেন ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ব্যক্তি জানেন যে, মুসলিম যুবক-যুবতীরা এ ধরনের দিনগুলোতে সব ধরনের চেতনা হারিয়ে এসব বিজাতীয় দিবস পালনের তুমুল প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে, অথচ তারা এ দিবসগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি জানার কোন প্রয়োজন অনুভব করে নাবরঞ্চ এর চেয়ে আফসোস হচ্ছে- তাদের মধ্যে যারা এর কিছু পটভূমি জানে তারা এ হিসেবে জানে যে, এ দিনটির ঐতিহাসিক পটভূমি হল- কোন কোন বর্ণনা মতে- খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোম দেশের একব্যক্তি সেনা সদস্যদের জন্য গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করতেন, কারণ তাদের রাজা সৈন্যদের জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেছিল; যেন যুদ্ধ ছেড়ে দিয়ে বিয়ে-সাদীতে ব্যস্ত হয়ে না পড়েঅবশেষে এ ব্যক্তির খবর ফাঁস হয়ে যায় এবং তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় লোকের ফাঁসির দিনটিকে স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য তারা এ দিনে উসব পালন করে, লাল গোলাপ উপহার দেয়, প্রেম পত্র আদান প্রদান করেবরঞ্চ অমুসলিম দেশগুলোর কোন কোনটিতে আরো বেশী বাড়াবাড়ি করা হয় এবং এ দিনটিকে ব্যভিচারের দিন হিসেবে পালন করা হয়বর্তমানে এ দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের উসবের দিন হিসেবে পালিত হচ্ছেএ দিনে তারা লাল পোশাক পরিধান করে, লাল গোলাপ বিতরনের মাধ্যমে 'লাল প্রতীককে' ফুটিয়ে তোলেযেন তারা এ কথা বলতে চাচ্ছে যে, সব ধরনের রেড সিগনাল অতিক্রম করে নারী-পুরুষের অবাধ সম্পর্ক গড়ে তোল; হোক না এ রেড সিগনাল ধর্মীয়, অথবা চারিত্রিক অথবা অন্য কোন পক্ষ থেকেআর লাল গোলাপ হল নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্ক গড়ার যে স্বীকৃত রীতি-নীতি রয়েছে তাকে উপেক্ষা করার প্রতীকআমাদের ধর্ম হচ্ছে আসমানী ধর্ম, যার মিশন হচ্ছ বিশ্বময়ী, যে মিশনের ইতিবাচক প্রভাব সমাজ ও সভ্যতার উপর সুস্পষ্টতাই আমাদের ধর্মে পারস্পারিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতিকে শুধু একদিনে সংকোচিত করার কোন সুযোগ নেই অথবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য কোন একটা দিনকে বিশেষিত করার কোন প্রয়োজন নেইবরং আমাদের ধর্ম সকল কালের, সকল সময়ের জন্য ভালোবাসার ধর্ম, সম্প্রীতির ধর্ম; তবে সে ভালোবাসা কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনার আলোকে স্বীকৃত হতে হবেআল্লাহর রাসূল (সাঃ) থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, “ঐ সত্তার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমানদার হওআর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসএ ছাড়া ইসলামের রয়েছে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান, নিজস্ব রীতি-নীতি যেগুলোর সমজাতীয় বিধি-বিধান বা রীতি-নীতি অন্য কোন মতবাদের কাছ থেকে গ্রহন করা সম্পূর্ণ অবৈধকারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখতে পেলেন মদীনাবাসীরা বিশেষ দুটি দিনে খেলাধুলা করেতখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিনের বিশেষত্বটা কি? তারা বললেন, জাহিলী যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা করতামতখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদেরকে এর চেয়ে ভালো দুটি দিন দিয়েছেন, তা হল- ঈদুল ফিতর (রোযার ঈদ) ও ঈদুল আযহা (কুরাবানীর ঈদ) [আবু দাউদ, নাসায়ী ও আহমদ] বোখারী ও মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে, “প্রতিটা জাতির খুশির দিন আছে এটা হল আমাদের খুশির দিনবিশুদ্ধ বর্ণনা সূত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহন করবে সে তাদের একজন বলে স্বীকৃত হবে”[আহমদ ও আবু দাউদ] এ আলোচনা থেকে আমরা এটা জানতে পারলাম এসব দিবস উদযাপনকারী মুসলিম সন্তানেরা নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়েছেন এবং তারা দুটো অপকর্মে জড়িত হয়েছেন- এক: তারা বিজাতীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহন করেছেনদুই: তারা বিজাতীদের বিরুদ্ধাচার করা পরিত্যাগ করেছেনঅথচ আল্লাহ পাকের ঘোষণা হচ্ছে- আর এভাবে আমি তা (কুরআনকে) আরবী ভাষায় বিধানসরূপ অবতীর্ণ করেছি আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পরও যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরন করেন তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য কোন সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী পাবেন না” [সূরা রাদ ৩৭]

মক্কা মুকাররমার মসজিদে হারামের ইমাম ও খতীব: শায়খ সৌদ বিন শুরাইমের প্রদত্ত খোতবার অনুবাদ
Blogger দ্বারা পরিচালিত.

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Affiliate Network Reviews