বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১১

রাগ পরিহার করা রসূলের(সাঃ) আদর্শ-


রাগ বা ক্রোধ ঈমানের বড় শত্রুকারো থেকে প্রতিশোধ নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের সময় যে তোলপাড় সৃষ্টি হয় তাকে ক্রোধ বলেক্রোধ যেমনিভাবে মানুষের ঈমান ও আত্মার শত্রু তেমনিভাবে অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ জীবনেরও বড় শত্রুক্রোধের কারণে মানুষের পশুসুলভ আত্মা সক্রিয় হয়চেহারা বিবর্ণ হয়শিরা-উপশিরা ফুলে যায়, মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেযার কারণে অনায়াসে মুখে অশস্নীল কথা, অঙ্গে অশস্নীল কাজ প্রকাশ পায়ক্রোধ একটি জ্বলন্ত অগি্নশিখা, তাই মানুষ ক্রোধান্বিত হলে সে অগি্ন সহজে নেভে না রাসূলে আকরাম (সা.) বলেন, "তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হবে সে যেন ওজু করেকেননা, রাগ শয়তানের প্ররোচনা, শয়তান আগুনের তৈরী আর আগুন নিভে যায় ঠান্ডা পানিতে (মেশকাত) হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, "রাগ ঈমানকে এমনভাবে ধ্বংস করে যেমন পিপুল গাছের তিক্ত রস মধুকে বিনষ্ট করে" রাসূল (সা.) আরোও বলেছেন, যে ক্রোধকে বাধা দেয় আলস্নাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার আজাবকে বাধা দেবেন অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, "সে ব্যক্তি এমন শক্তিশালী নয় যে, মানুষকে ধরাশায়ী করে বরং সেই শক্তিশালী যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে
জনৈক সাহাবী রাসূল (সা.)- কে বললেন, আমাকে কিছু নসিহত করুনতিনি বললেন, তুমি রাগ করোনাপবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের ত্রুটি মার্জনাকারীদের জন্য আলস্নাহ তায়ালার ক্ষমা ও জান্নাত নির্ধারিতআলস্নাহ পাক স কর্মশীলদের ভালবাসেনহযরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে আলস্নাহর রাগ থেকে কিসে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, তুমি নিজে রাগান্বিত হয়ো নারসূল (সা.) বললেন, যে আপন ক্রোধ দমন করে ল্লাহ তায়ালা তার দোষ গোপন করেনতিনি আরো বলেন, যখন তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয় সে যেন বসে পড়ে, এতেও যদি রাগ প্রশমিত না হয় তাহলে যেন সে শুয়ে পড়ে। (মেশকাত) অন্য হাদীসে আছে ক্রোধ একটি স্ফুলিঙ্গ, যা অন্তরে প্রজ্বলিত হয়তোমরা কি দেখ না, ক্রুদ্ধ ব্যক্তির ঘাড়ের শিরাগুলো ফুলে যায়, চক্ষু রক্তবর্ণ হয়ে যায়? তোমাদের কেউ যদি নিজেদের মধ্যে এ অবস্থা দেখে তবে দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে

ক্রোধের বিস্ফোরণই হূদরোগের অন্যতম কারণ-এ সত্যটি আবিষ্কার করেছেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংলাণ্ডের সেন্ট জার্জেস হাসপাতালের বিখ্যাত ডাক্তার জন হান্টার তার জীবনের বিনিময়ে চিকিসা জগতে জন হান্টার অতি পরিচিত নামতার সফল চিকিসার সুখ্যাতি বিশ্বময় কিংবদন্তির ন্যায় ছড়িয়ে আছেবদমেজাজের জন্যও তিনি বিখ্যাত ছিলেন তার সাথে রুগিরা একটু এদিক সেদিক ব্যবহার করলেই তিনি রেগে আগুন হয়ে যেতেন রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়তেন, স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতেনএ সময় তার বুকে মৃদু যন্ত্রণা হতএ অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা যে দিন বেশী হত সেদিন যন্ত্রণা অসহ্য রকমের হতডাক্তার হান্টার তার বন্ধুদের বলতেন, দেখ, যদি আমার আকস্মিক মৃতু্য হয় তাহলে বুঝবে আমার ক্রোধের কারণেই হয়েছে

একদিন তার চেম্বারে একজন খুঁতখুঁতে মেজাজের রোগী এলেনসে তার কি রোগ হয়েছে, রোগ কেন হয় এরকম বহু প্রশ্ন করে ডাক্তারকে উত্ত্যক্ত করে তুললেনডাক্তার তার স্বভাব অনুযায়ী ক্ষোভে ফেটে পড়েননিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেনআর বুক চেপে ধরে রোগিকে বললেন, মাফ করবেন, আমি একটু পাশের রুমে যাচ্ছিপাশের রুমের মেঝেতে ঢলে পড়লেনরাগের বিস্ফোরণেই তার মৃতু্য হলবলা যায় তখন থেকেই মানুষ হূদরোগের তাক্ষণিক মৃতু্যর কারণ হিসেবে এই ক্রোধের বিস্ফোরণকেই দায়ী করে আসছে

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন

রেগে গেলে মানুষ কিভাবে হেরে যার তার একটি চমকার আমেরিকান গল্প আছেএক মার্কিন ধনকুবেরের একমাত্র সুন্দরী কন্যাকন্যার ছেলে-বন্ধুর কোনো অভাব নেইঅভাব থাকার কথাও নয়, একে তো সুন্দরী তারপর ধনকুবেরের মেয়ে মেয়ের যখন বিয়ের বয়স হলো বাবা তাকে বললেন, এখন তো তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবেবলো তোমার কাকে পছন্দযাকে পছন্দ তার সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবোমেয়ে পছন্দ প্রকাশে অপারগতার কথা জানালোবলল আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি নাকারণ সবাই বলে তারা আমাকে ভালবাসেআমার জন্যে প্রয়োজনে জান দিয়ে দেবেবাবা চিন্তায় পড়ে গেলেনকি করা যায় ভাবতে ভাবতে বুদ্ধি বেরিয়ে এলমেয়ের সাথে আলাপ করে বাবা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন- প্রতিযোগিতা হবেপ্রতিযোগিতায় যে প্রথম হবে তাকেই মেয়ে বিয়ে করবে প্রতিযোগিতার দিন দেখা গেল শতাধিক যুবক সুন্দর পোশাকে পরিপাটি অবস্থায় ধনকুবেরের বাড়িতে এসে উপস্থিতধনকুবের সবাইকে বাড়ির সুইমিং পুলে নিয়ে গেলেনসুইমিংপুলের পাশে সবাইকে দাঁড় করিয়ে বললেন, দেখ, প্রতিযোগিতা খুব সহজসাঁতার প্রতিযোগিতা হবেসাঁতারে যে প্রথম হবে তার সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে দেব তবে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেয়ার আগে ভালো করে খেয়াল করোপানির নিচে বহু কুমির অপেক্ষা করছেআর এই কুমিরগুলোকে এক মাস ধরে কোনো খাবার দেয়া হয়নি ধনকুবেরের কথা শেষ হতে না হতেই দেখা গেল যে, এক যুবক পানিতে পড়ে চোখ বন্ধ করে দুই হাত পা নাড়ছেকুমিররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই যুবক ভাগ্যক্রমে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুইমিংপুলের ওপারে গিয়ে উটেছেঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাকবিস্ময়ের ঘোর কাটতেই ধনকুবেরের মেয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো যুবককে বিস্ময়াবিষ্ট কষ্ঠে বলল, তোমার মত বীরকেই আমি চাচ্ছিলামতুমিই আমার স্বামী হওয়ার একমাত্র উপযুক্তএদিকে যুবকের রাগ তখনও থামেনিউত্তেজনায় হাত-পা কাঁপছেএক ঝটকায় মেয়েটিকে দূরে ঠেলে দিয়ে যুবক চিকার করে উঠল, ‘কোন ... জাদা আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিল, তাকে আগে দেখে নেই
সুন্দরী স্ত্রী ও ধনকুবেরের সম্পদ ওই যুবকের হাতের মুঠোর চলে এসেছিলধাক্কা যে-ই দিক, সে সুইমিং পুল অতিক্রম করে সবার চোখে বিজয়ী বীর বলে গণ্য হয়েছিল, কিন্তু শুধুমাত্র রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সৌভাগ্য এসেও তা হাতের নাগালের বাইরে চলে গেলঅথচ রাগ দমন করতে পারলে, ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সে অনায়াসে মুচকি হেসে বলতে পারতো, ‘পুরুষ তো আমি একাই, ওরা আবার পুরুষ নাকি!
নিজের জীবন অনুসন্ধান করলেও আপনি হয়তো দেখতে পাবেন অনেক সুযোগ নষ্টের পিছনে রয়েছে আপনার রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান তাই সবসময় স্মরণ রাখুন রেগে গেলেন, হেরে গেলেন  রাগের ক্ষতিকর প্রভাব
মানসিক
আমরা যখন রেগে যাই তখন পূবাপর চিন্তা না করেই আমরা বলে ফেলি বা করে ফেলিএর মাশুল গুণতে হয় পরে অনুশোচনা করে বা সুযোগ হাতছাড়া করেআবার রাগ চেপে রাখাও ক্ষতিকরগবেষণায় দেখা গেছে যারা দীর্ঘদিন ধেও ক্ষোভ জমিয়ে রাখছে তাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশিমনোবিজ্ঞানীরা বলেন, বিষণ্নতা হলো চেপে রাখা ক্ষোভরাগ বা ক্ষোভ আসলে জীবনের আনন্দকেই কেড়ে নেয়
শারীরিক
রাগ প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত যাই হোক শরীরের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে দ্বিমত নেই গবেষকদের মধ্যেরাগের সরাসরি প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে
      • পেশীর টেনশন বাড়ার ফলে মাথা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা
      • হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট
      • পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি এবং বদহজম, অ্যাসিডিটি ও আলসার
      • রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং স্ট্রোক, এনিগমা এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাকও
আমরা যখন রেগে যাই আমাদের দেহে কিছু জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটেযেমন, হার্টরেট, ব্লাড প্রেশার এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়, ক্যাটাকোলামাইন নিউরোট্রান্সমিটার এবং অ্যাড্রিনালিন ও নর- অ্যাড্রিনালিন হরমোন নি:সরিত হয় যা উত্তেজনা সৃষ্টি করেদেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ফলে ঘাম হয় এ তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করার জন্যেপেশী সংকুচিত হয় এবং হাত-পায়ে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় যেকোনো দৈহিক তপরতাকে পরিচালনা করার জন্যেঅর্থা ফ্লাইট অর ফাইট রেসপন্স সক্রিয় হয়ে ওঠে
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দীর্ঘসময় ধরে যদি এই রেসপন্স চলতে থাকে তাহলে অনেক ধরনের ক্রনিক রোগ হতে পারে যেমন, ইনসমনিয়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, আলসার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মৃগী, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, ব্যাকপেইন, ফুসফুসের অসুখ এমনকি ক্যান্সার
একটি গবেষণায় দেখা গেছে রেগে যাওয়ার প্রবণতা বেশি এমন ব্যক্তিরা তাদেও বয়স ৫৫ বছর হওয়ার আগেই অন্যদেও তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে বেশি আক্রান্ত হনআরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক পুরুষদেও ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল, অ্যালকোহল, সিগারেট বা অতিরিক্ত ওজনের চেয়েও হৃদরোগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে রেগে যাওয়ার প্রবণতার
এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আয়ুস্কালের ওপরও রাগের প্রভাব আছেবদরাগী বা রগচটা মানুষ বলে পরিচিতদের মৃত্যুর হার ৫ গুণ বেশি
পারস্পরিক সম্পর্ক
অন্য যেকোনো আবেগের চেয়ে রাগের ফলে সম্পর্কেও জটিলতাগুলো বেশি হয়পরিবারের সদস্য, বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী বা যেকোনো মানুষই একজন রাগীকে এড়িয়ে চলতে চায় এবং পছন্দ করে না
সাফল্য
সাফল্যের অন্তরায় হিসেবে রাগকে মহামানবরা সবসময়ই শনাক্ত করেছেন১৩০০ বছর আগেই ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) রাগন্বিত অবস্থায় চারটি কাজ থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছেন,
      • সিদ্ধান্ত গ্রহণ
      • শপথ গ্রহণ
      • শাস্তি প্রদান
      •  আদেশ প্রদান
আধুনিক বিজ্ঞান এখন এ পরামর্শের সার্থকতা খুঁজে পাচ্ছেনহার্ভার্ড ডিসিশন সায়েন্স ল্যাবরেটরির জেনিফার লারনার দেখেছেন মানুষ যখন রেগে যায় তখন সিদ্ধান্ত নেবার আগে সে খুব বেশি ভাবতে চায় না, বোকাদের মতো চিন্তা করে এবং উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির জন্যে যৌক্তিক কারণ নয়, ব্যক্তিকে দোষারোপ করে রেগে গেলে মনোযোগ কমে যায় এবং শুধু রাগের বিষয় ছাড়া আর কোনোকিছু মাথায় থাকে নাচিন্তা করুন ২০০৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রায় হিরো হয়ে যাওয়া জিনেদাইন জিদানের কথা যিনি মুহূর্তেও উত্তেজনায় মাতারাজ্জিও ওপর চড়াও হয়ে পেলেন লাল কার্ড, হারালেন নিজের সুযোগ, দলের সুযোগভাবুন মাইক টাইসনের কথা যে প্রতিপক্ষ হলিফিল্ডের কান কামড়ে হারিয়েছিলো শিরোপা
আত্মিক
রাগ দমন করা ছাড়া আত্মিক সাধনার পথে অগ্রসর হওয়াও সম্ভব নয়রাগের ধ্বংসাত্মক দিক সম্পর্কে সব ধর্মেই সচেতন করা হয়েছে
মহামতি বুদ্ধ বলেছেন, রণক্ষেত্রে সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ। [সহস্সবগ্গো: ১০৩]
যীশু বলেন, যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাদের ক্ষমা করে দাওসদাপ্রভুও তোমাকে ক্ষমা করবেন। [মথি: ৬:১৪]
বেদে আছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থেকো। [সামবেদ: ৩০৭]
মহানবী (সা) বলেন, ক্রদ্ধ হয়ো নাযে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করতে পারে সে-ই প্রকৃত বীর। [বোখারী]
 রাগ করে কি আসলে কোনো উদ্দেশ্য হাসিল হয়?
অনেকেই মনে করেন কিছু রাগ থাকা ভালোচলুন দেখা যাক রাগের কিছু সাধারণ কারণ আসলেই তা ঠিক কিনা
    • কেউ খারাপ ব্যবহার করলেরাগ করলে কি পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে তার চেয়ে আপনি মাথা ঠাণ্ডা রাখলে সম্ভাবনা এই যে অপর পক্ষ ভুল বুঝবে এবং অনুশোচনা করবে
    • ঠকানোর চেষ্টা করলেরেগে না গিয়ে ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং ভবিষ্যতের জন্যে সাবধান হয়ে যান
    • অন্যায় অবিচার করলেমনে রাখুন, একা প্রতিবাদ করা অর্থহীনসবলের অন্যায়ের মুখে দুর্বল এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেঅন্যায়ের প্রতিকার করার মতো শক্তি এবং সঙ্ঘবদ্ধতা অর্জন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন
    • স্বীকৃতি না পেলেস্বীকৃতিরপ্রত্যাশা না করে কাজ করে যানকাজই তার প্রতিদান দেবে
    • বিদ্রুপ করলেরেগে গিয়ে আপনি কি তার উদ্দেশ্যকেই সার্থক করছেন না? ডনজের নিয়ন্ত্রণ অন্যেও হাতে তুলে দিয়ে কেন হাসির পাত্র হবেন? উল্টো আপনি হাসুন সে ভড়কে যাবে
    • মানসিক চাপ থাকলেরেগে গেলে চাপ বাড়বে বৈ কমবে না তাতে কাজের মান আরো খারাপ হবেসময় লাগবে বেশিবরং এই চাপকে দেখুন সুযোগ হিসেবে নিজের দক্ষতাকে আরো বাড়িয়ে নেয়া এবং আরো যোগ্য হবার জন্যে
    • কর্তৃত্ব হারানোর ভয় থাকলেকর্তৃত্ব ধরে রাখার আসল কৌশল হলো মাথা ঠাণ্ডা রাখাপরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারা
    • প্রত্যাখ্যাত হলেপ্রস্তাব দেয়ার অধিকার যেমন আপনার আছে তেমনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অধিকারও তার আছে এটা আপনাকে স্বীকার করতে হবে
    • যুক্তিসংগত কথা বুঝতে না চাইলেউত্তেজিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুনযে ভাষায় বললে অপরপক্ষ বুঝবে তাকে সে ভাষায়ই বোঝানপ্রয়োজনে সময় নিন
রাগ না করে কি থাকা যায়?
আপনি হয়তো বলতে পারেন রাগ না করে কি থাকা যায়? একজন অহেতুক গালিগালাজ করল, মা-বাবা তুলে গালি দিল, তখনও কি প্রো-অ্যাকটিভ থাকা যায়? অনায়াসে থাকা যায়
মহামতি বুদ্ধের জীবনের একটি ঘটনা এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্যে এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত মহামতি বুদ্ধ তখন বৃদ্ধএক চালবাজ লোক জুটে গেলসে ভাবলো বুদ্ধ আর বেশি দিন বাঁচবেন নাএখন তাঁর সাথে কিছুদিন থেকে যদি কিছু কায়দা-কানুন টেকনিক শিখে নেয়া যায় তাহলে বুদ্ধ মারা যাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে বুদ্ধের অবতার ঘোষণা করে দেবতখন আর পরিশ্রম করতে হবে নাবসে বসে দান-দক্ষিণা গ্রহণ করেই জীবনটা সুখে কাটিয়ে দেয়া যাবেযেই ভাবা সেই কাজভণ্ড একেবারে নিবেদিতপ্রাণ শিষ্যের মতো ভান করে বুদ্ধের সেবা যত্ন করতে লাগলমহামতি বুদ্ধ তার মতলব বুঝলেও কিছুই বললেন নাবছর দুই পার হওয়ার পর ভণ্ড শিষ্য বুঝতে পারল যে, সে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি কিছুই লাভ করেনি কারণ নিয়ত পরিষ্কার না থাকলে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করা যায় নাভণ্ড শিষ্য এর ফলে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলমনে মনে ঠিক করল এর উপযুক্ত প্রতিশোধ সে নেবেএকদিন ভোরবেলা মহামতি বুদ্ধ একা বসে আছেনভণ্ড ভাবল এই সুযোগসে কাছে গিয়ে বুদ্ধকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে লাগলবুদ্ধ চুপচাপ শুনছেনকিছুই বলছেন নাঅনেকক্ষণ গালিগালাজ করার পর ভণ্ড শিষ্য যখন একটু থামল বুদ্ধ তখন মুখ খুললেনশান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি তোমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারি? ভণ্ড শিষ্যের মেজাজ তখনও ঠাণ্ডা হয়নিসে ঝাঁঝাল স্বরে বলল, জিজ্ঞেস করেন, কি জিজ্ঞেস করবেন? বুদ্ধ বললেন, ধরো তোমার কিছু জিনিস তুমি কাউকে দিতে চাচ্ছকিন্তু সে যদি তা না নেয়, তাহলে জিনিসগুলো কার কাছে থাকবে? উত্তেজিত শিষ্য জবাব দিল, ‘এ তো সহজ বিষয়এটাও আপনি বোঝেন না? আমার জিনিস আমি যাকে দিতে চাচ্ছি সে যদি না নেয় তাহলে আমারই থাকবেবুদ্ধ আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার জিনিস তুমি তাকে দিতে চাচ্ছ সে যদি না নিলে তোমার থাকবে?’ ভণ্ড শিষ্যের উত্তর, ‘হ্যাঁ আমার থাকবেএবার মহামতি বুদ্ধ বললেন, তাহলে এতক্ষণ তুমি আমাকে যা (গালিগালাজ) উপহার দিলে, আমি তার কিছুই নিলাম না
আপনিও আপনার জীবনে ব্যক্তিগত গালিগালাজ ও অপমানসূচক কথাবার্তার জবাবে মহামতি বুদ্ধের এই কৌশল অবলম্বন করতে পারেনআসলে একজন মানুষ যখন অযৌক্তিক আচরণ করে, গালিগালাজ করে, মা বাবা তুলে গাল দেয় তখন এর জবাবে আপনি তার মা-বাবা তুলে গাল দিতে পারেন, কিন্তু তার মা-বাবাকে গালি দিয়ে আপনি নিজেকেই অপমানিত করলেনসে গালিগালাজ করে আপনার শান্তি নষ্ট করতে এসেছিল, আপনি গালির জবাব দেয়ার অর্থই হচ্ছে তার উদ্দেশ্যকে সফল করাতারচেয়ে কিছুক্ষণ তার গালিগালাজ শোনার পরে আপনি যদি বিনয়ের সাথে বলেন, ‘ভাই/আপা আপনি অনেক মেহেরবানঅনেক কিছু আমাকে দিলেনকিন্তু এগুলো রাখার কোনো জায়গা আমার কাছে নেইআমি কিছুই নিলাম নাএগুলো আপনারই থাক; এ কথা বলার পর দেখবেন, অপরপক্ষ দাঁত কামড়ে চলে যাচ্ছেতার গালিগালাজ যে আপনার উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারলো না, এটাই তার পরাজয়আর এ পরাজয়ের যন্ত্রণা হয়তো অনেক দিন সে বয়ে বেড়াবেসে এসেছিল আপনার শান্তি নষ্ট করতে, কিন্তু শান্ত থেকে আপনি তাকে পরাভূত করলেন

 

রাগের প্রতিকার

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান
আপনি যদি সত্যিই মনে করেন যে রেগে গেলেন তো হেরেও গেলেন, তাহলে সত্যিই আপনি এ সমস্যা থেকে মু্ক্তি পাবেন
রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন স্টিকার লাগান
আপনার রাগের মুহূর্তগুলোকে ভিডিও করে রাখুনপেও দেখুন রেগে গেলে আপনি কীরকম দানবীয় আচরণ করেছেন?
অটোসাজেশন দিনরেগে গেলাম তো হেরে গেলাম
কারণ খুঁজে বের করুন    
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাগের আসল কারণ অর্ন্তগত হীনম্মন্যতানিজের দুর্বলতাকেই মানুষ ঢাকার চেষ্টা করে দুর্ব্যবহার বা রাগারাগির মধ্য দিয়েতাই খুঁজে দেখুন আপনার মধ্যে কোনো হীনম্মন্যতা আছে কি নাহও উন্নত শির বা নেতিচিন্তার মেডিটেশন করুনআত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচকতা বাড়াতে অটোসাজেশন দিন
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
কোনো মানসিক সমস্যার কারণে এই রেগে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত


1 মন্তব্য(গুলি):

Unknown বলেছেন...

অনেক ভাল লাগলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Affiliate Network Reviews