রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১১

পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে

পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর পাশ্চাত্যে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টাসহ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও আক্রমণাত্মক নীতি জোরদার হয়ে ওঠে। ওই ঘটনাকে মুসলমানদের কাজ বলে প্রচার করছে পাশ্চাত্য। মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী ও সহিংসতাকামী হিসেবে তুলে ধরা এবং ইসলাম ধর্মকে উগ্র মতবাদ হিসেবে প্রচার করা ওই বিশেষ মহলের প্রধান কর্মসূচীর অংশ হয়ে পড়েছে। পাশ্চাত্যে মুসলমানদের ওপর বিধি-নিষেধ, চাপ ও হয়রানিও জোরদার হয়েছে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে এত প্রচারণা ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ সত্ত্বেও পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ এবং নওমুসলিমের সংখ্যা আগের চেয়েও লক্ষ্যনীয় হারে বাড়ছে। ফলে পাশ্চাত্যের ইসলাম-বিদ্বেষী মহল আরো বিচলিত হয়ে পড়েছে। পাশ্চাত্য ইসলাম-বিদ্বেষী তৎপরতায় সব ধরনের গণমাধ্যকে ব্যবহার করা সত্ত্বেও ইসলামের বিস্তৃতি ঠেকাতে পারছে না।
ওয়াশিংটনের একটি ইসলামী কেন্দ্রের পরিচালক জনাব মোহাম্মাদ নাসের পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ এবং নওমুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেছেন, "চলতি বছর পবিত্র কুরআন পোড়ানোর হুমকি এবং ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনাস্থলের কাছে মসজিদ নির্মাণের বিরুদ্ধে একই মহলের প্রতিবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি নিউইয়র্কের ১৮০ জন নারী ও পুরুষ ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত হয়েছেন।" এভাবে পবিত্র কুরআন তথা মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র হৃদয়ের মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করছে।
এবার ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের কয়েকজন নওমুসলিমের বক্তব্য তুলে ধরব।
মরিয়ম ফ্রাঁসোয়া বৃটেনের একজন নওমুসলিম। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে তিনি শৈশবেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা ফ্রাঁসোয়াকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে। কারণ, তার মতে ওই ঘটনার পরই ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের প্রচারণা জোরদার হয়। মরিয়ম ফ্রাঁসোয়া এ সম্পর্কে বলেছেন,
"ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণার ফলে এ ধর্ম সম্পর্কে আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমি এ ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেই। ইসলামী চিন্তাধারাগুলো বিশ্লেষণের পর আমার কাছে বিভিন্ন দিক থেকে এ ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ ধর্ম বলে মনে হয়েছে। উত্থান-পতন বা চড়াই-উৎরাইয়ের ঘটনায় ভরা ইসলামের ইতিহাসও আমার কাছে চমৎকার লেগেছে এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র ব্যক্তিত্ব আমাকে আকৃষ্ট করেছে।"
মরিয়ম ফ্রাঁসোয়া ইসলামের নবী (সাঃ)-কে শান্তিকামী বলে মনে করেন। বিশ্বনবী (সাঃ)'র প্রতি ভালোবাসা তার হৃদয়ের গহীনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। তিনি গভীর শ্রদ্ধা ও উদ্দীপনা নিয়ে শেষ নবী (সাঃ)'র অসাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে কথা বলেছেন। মরিয়ম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "মহানবী (সাঃ)'র ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত এবং তার কোনো কোনো বাণী সম্পর্কে চিন্তাভাবনা , যেমন, তিনি বলেছেন, ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও সত্য কথা বলা উচিত, কিংবা যে তোমার ক্ষতি করেছে বা তোমাকে কস্ট দিয়েছে তুমি তার কল্যাণ বা উপকারে লিপ্ত হও- মূলতঃ এ বিষয়গুলোই আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছে। ইসলামের নবী (সাঃ) ইতিহাসের মহান ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে ভুল ধারণা প্রচারিত হয়েছে এবং তাঁকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি।"
জ্যাকুলিন হার্পার একজন মার্কিন নওমুসলিম যুবতী। ২৫ বছর বয়স্ক এ মার্কিন নারী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। হার্পার এর আগে ছিলেন গীর্যার সদস্য। তিনি ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে জীবনের শ্রেষ্ঠ পথই বেছে নিয়েছেন বলে মনে করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে হার্পার বলেছেন, " আপনারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম সম্পর্কে খারাপ কথা শুনছেন। এ ছাড়াও বহু কারণেই আমি ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে ও গবেষণা করতে উৎসাহিত হয়েছি। এ জন্য আমি অনেক বই পড়েছি। এসব বই আমাকে বদলে দিয়েছে এবং আমার ওপর গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।"
মিসেস হার্পার ইসলামকে সবচেয়ে উন্নত ও পরিপূর্ণ ধর্ম বলে মনে করেন। তার মতে, চিন্তাভাবনা ও পড়াশোনার মাধ্যমে সত্যকে আবিস্কার করা যায়। ইসলামও মানুষকে সব সময় চিন্তা-ভাবনা করতে বলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের দারুল হুদা নামক ইসলামী কেন্দ্রের পরিচালক জামাল আল গামুস বলেছেন, "আমাদের এ কেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসা বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিকই ইসলাম সম্পর্কে অনেক তথ্য রাখেন। তারা সাহিত্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই পড়া ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম এবং মতাদর্শ সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেছেন। তাই তারা যখন ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সাথে সংলাপে বসেন তখন খুব দ্রুত ইসলাম গ্রহণ করেন। এখন প্রতিদিন একদল মার্কিন নাগরিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন ও মসজিদে যাচ্ছেন।"
ডিয়েগো রডার্ড একজন নওমুসলিম মার্কিন যুবক। তিনি নিউইয়র্কের সনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত শিল্পের ওপর পড়াশুনা করছিলেন। ডিয়েগো ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এখন তার নাম আলী আকবার। মুসলমান হবার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, "পশ্চিমা মতাদর্শগুলো আমার মন-মানসিকতার সাথে খাপ খাচ্ছিল না এবং এসব মতবাদ আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আমার মন সব সময়ই এসব চিন্তাধারার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। তাই আমি গ্রহণযোগ্য এমন এক চিন্তাধারার সন্ধান করছিলাম যে চিন্তাধারা আমাকে জীবনের অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।"
সাবেক ডিয়েগো আরো বললেন," মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্তৃত্বশীল মতাদর্শগুলো ধর্ম-ভিত্তিক নয়, তাই এসব মতবাদ আমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। পাশ্চাত্যের লাগামহীন উশৃংখল জীবন এখন যুব সমাজের ওপর সমকামিতা চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে সেখানে পারিবারিক বন্ধনের ভিত্তি দূর্বল ও বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। আমার কাছে এ প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয় যে, আমরা কেন এ পৃথিবীতে এসেছি এবং কিভাবে আমাদের জীবন-যাপন করা উচিত, আর জীবন যাপনের শ্রেষ্ঠ পথ কোনটি? এ অবস্থায় ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি ইসলাম সম্পর্কে আমাকে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। আমি এ সময় ইরান ও আয়াতুল্লাহ খোমেনী সম্পর্কে পড়াশুনা শুরু করি। ইমাম খোমেনী (রঃ)'র লেখা একটি বই পড়ার পর আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি ও শিয়া মাজহাবের অনুসারী হই। আয়াতুল্লাহ খোমেনী আমাকে ইসলামে পৌঁছার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং ইরানের রয়েছে কয়েক হাজার বছরের সমৃদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতি।"
ইহুদি গবেষক মোশে বিলজিন পাশ্চাত্যে ইসলামের ভবিষ্যত সম্পর্কে বলেছেন, "সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন পাশ্চাত্যে ইসলামই হবে প্রধান ধর্ম। ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বহু গীর্যা জাদুঘরে পরিণত হয়েছে, অথচ মসজিদগুলোতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লিকে জায়গা দেয়ার স্থান নেই।" লুজ ওয়ার নামক বেলজীয় সাময়িকী এক নিবন্ধে লিখেছে, বেলজিয়ামে খৃস্টানরা যে ব্যাপক হারে মুসলমান হচ্ছে তাতে ২০১২ সাল নাগাদ দেশটির মুসলমানের সংখ্যা আরো ৫ লক্ষ বৃদ্ধি পাবে।
ইসলাম ধর্মে মানুষ ও খোদার মধ্যে কোনো মধ্যস্থতা না থাকায় এবং এ ধর্ম পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতাকে গুরুত্ব দেয়ায় বেলজিয়ামের নাগরিকরা ইসলাম গ্রহণ করছেন বলে নওমুসলিম বেলজীয়রা জানিয়েছেন। (সূত্র: রেডিও তেহরান)




0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Affiliate Network Reviews